সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যখন আমরা পিসির পাওয়ার অন বাটনটি চাপ দিয়ে চলে যেতাম সকালের নাস্তা খেতে বা গোসল করতে। কাজ শেষ করে ফিরে এসে দেখতাম পিসিটি কাজ করবার জন্য তখন কেবল যেন গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। আজকাল অবশ্য আর এত সময় লাগেনা। খুব বেশি হলে ১মিনিট। দ্রুত হয়ে গেছে প্রসেসর, র্যাম, হার্ডডিস্ক সবকিছুই। কিন্তু এই এক মিনিটও এখন আমাদের সহ্য হয় না। আমরা নিত্য নৈমিত্তিক চেষ্টা করি কিভাবে এই সময়টাকে আরও কমিয়ে আনা সম্ভব। যেমন ধরুন এই মুহূর্তে আমার পিসিটির বুট সময় প্রায় ৬৯ সেকেন্ড। আমি কয়েক ঘণ্টা ধরে টুইক এবং পরীক্ষার পর এই সময়কে আমি ৪৭ সেকেন্ডে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। এখানে দেয়া হল কিভাবে কাজটি আমি করেছি।
পিসির কনফিগারেশন: আমার পিসিটিতে রয়েছে প্রথম প্রজন্মের ইন্টেল কোর আই ৭ কোয়াড কোর সিপিইউ, ৬ গিগা বাইট কোরসেয়ার র্যাম, এবং ১টি ৭২০০ আরপিএম গতি সমৃদ্ধ ৫০০গিগাবাইট সাটা হার্ডড্রাইভ এবং ৮০ গিগাবাইট ৭২০০ আরপিএম বুট ড্রাইভ। আমি সাধারণত বুটের জন্য অন্য আরেকটি হার্ডড্রাইভ ব্যবহার করে থাকি। এর ফলে ভাইরাস বা অন্যকোন কারণে পিসিতে সমস্যা দেখা দিলেও আমার প্রয়োজনীয় তথ্যাদি অন্য হার্ডড্রাইভে নিরাপদ থাকে। এই মেশিনটি আমি গত দুই বছর ধরে নিয়মিত ব্যবহার করে আসছি, আর তাই এতে জড়ো হয়েছে নানা ধরনের অ্যাপ্লিকেশন। ইন্সটল এবং আনইন্সটল করেছি অনেক সফটওয়্যার। এই রকম বহুল ব্যবহৃত পিসিতে আপনি খুব বেশি সময় কমাতে পারবেন না, তবে যা হবে তাও কম কি।
বুট প্রসেস: যখন আপনি আপনার পিসিটিকে অন করেন তখন প্রসেসরটি প্রারম্ভিক কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে এবং বুট লোডার রম থেকে নির্দিষ্ট একটি মেমরি অ্যাড্রেস খুঁজতে থাকে। খুঁজে পাওয়ার পর প্রসেসর সেই কোডটি রান করে, এই কোডটি সিস্টেম বুট লোডার হিসাবে পরিচিত। এই বুট রম পিসিতে থাকা সকল হার্ডওয়্যারকে নির্দিষ্ট করে এবং সেগুলো ঠিক আছে কিনা সেই পরীক্ষা সম্পাদন করে। এর পর সে প্রথম যে স্টোরেজ ডিভাইস রয়েছে সেখানে একটি নির্দিষ্ট স্থান খুঁজতে থাকে- এবং সেই নির্দিষ্ট স্থানে যে কোড থাকে তা রান করতে শুরু করে। এরই মাধ্যমে শুরু হয় আপনার অপারেটিং সিস্টেম লোড করার প্রক্রিয়াটি। উইন্ডোজের ক্ষেত্রে এই কোডটিকে বলা হয় উইন্ডোজ বুট ম্যানেজার। বুট ম্যানেজার তার বুট প্রসেসের কোন এক সময় উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের কোর বা কার্নেলটিকে মেমরিতে লোড করে।
এই সময় এই কার্নেলের সাথে সাথে কিছু প্রয়োজনীয় ড্রাইভার এবং হার্ডওয়্যার অ্যাবস্ট্র্যাক্সন লেয়ারও লোড(HAL) হয় মেমরিতে। এই হ্যাল এর কাজ হল অপারেটিং সিস্টেম এবং হার্ডওয়্যারের মাঝে সংযোগ তৈরি করা। এরপর উইন্ডোজ কিছু অতিপ্রয়োজনীয় সার্ভিস চালু করে যেমন, ভার্চুয়াল মেমরি ম্যানেজার এবং ইনপুট/আউটপুট ম্যানেজার, সাথে সাথে লোড করে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি। এই রেজিস্ট্রিতে থাকে বুটের সময় কি কি সার্ভিস, ড্রাইভার এবং অ্যাপ্লিকেশন চালু হবে তার তথ্য। রেজিস্ট্রি আসলে একটা ডাটাবেজ যেখানে কনফিগারেশন সেটিং স্টোর করা হয়, নানা ধরনের অপশন সমূহ, এবং হাই-লেভেল অ্যাপ্লিকেশন এবং লো-লেভেল ওএস সার্ভিস এর প্রয়োজনীয় স্থানের তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা হয়। আর তাই সময়ের সাথে সাথে ব্যবহারকারীর নানারকম অ্যাপ ইন্সটল আনইন্সটল কারণে এর আকার বাড়তে থাকে আর তার ফলে বেড়ে যায় লোডের সময়। বুট সময় বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সার্ভিস এবং স্টার্টাপ অ্যাপ্লিকেশনও দায়ী থাকে। আর তাই বুট সময় কমানোর জন্য আমরা কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে এগোব। এগুলো হচ্ছে:
- বায়োস
- উইন্ডোজ বুট ম্যানেজার
- সিস্টেম সার্ভিস
- অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিস
- স্টার্টাপ সার্ভিস
- উইন্ডোজ রেজিস্ট্রি
বহিঃ-সার্ভিস নিষ্ক্রিয় করা এই কাজটি করবার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে একটি টেক্সট ফাইল, যার মধ্যে থাকবে “Stop the Stopwatch.” লেখাটি। এই টেক্সট ফাইলটিকে আপনি আপনার স্টার্টাপ ফোল্ডারে সেভ করবেন “C:\Users\your username\AppData\Roaming\Microsoft\Windows\Start Menu\Programs\Startup”। এর মাধ্যমে আপনি একটি স্টপ ওয়াচ তৈরি করবেন যার মাধ্যমে বুট প্রসেসকে টাইম করতে পারবেন এবং জানতে পারবেন কখন এই ওয়াচকে বন্ধ করতে হবে। যদিও এর ফলে বুট প্রসেসটি পুরো হবে না কিন্তু আপনার পিসিটি ব্যবহারযোগ্য হবে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করবার পর আমার পিসিটির বুট সময় কমে হলো ৬৯ সেকেন্ড। এবার আমাদেরকে সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, প্রথমেই আমরা দেখবো আমাদের মেশিনে কি কি সফটওয়্যার স্টার্টাপের সময় অন হচ্ছে।
এর জন্য স্টার্ট -> সার্চ প্রোগ্রাম অ্যান্ড ফাইলস -> টাইপ করুন “msconfig” এবং চাপুন এন্টার বাটন। যেই উইন্ডোটি আপনার সামনে উপস্থিত হবে সেখানকার সার্ভিস ট্যাবটিতে ক্লিক করুন। এখানে প্রচুর মাইক্রোসফটের সার্ভিস দেখতে পাচ্ছেন। এর মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় সার্ভিসটি খুঁজে বের করা একটু কষ্টকর আর তাই ক্লিক করুন ‘Hide all Microsoft services’, এখন কয়েকটি মাত্র সার্ভিস এখানে দেখাচ্ছে । যদিও আমরা কিছু মাইক্রোসফটের সার্ভিসও বন্ধ করে দিব। আপাতত হাইড চাপ দেবার পর যে সকল সার্ভিস চালু হচ্ছে সেগুলোকে আমরা বন্ধ করে দিই। মাইক্রোসফটের যে সকল সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া যায় সেগুলো হচ্ছে:
- উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টার রিসিভার
- উইন্ডোজ মিডিয়া সেন্টার শিডিউল সার্ভিস
- মাইক্রোসফট অফিস গ্রুভ অডিট সার্ভিস
- মাইক্রোসফট অফিস ডায়াগনস্টিক সার্ভিস
- স্মার্ট কার্ড রিমুভাল পলিসি
- স্মার্ট কার্ড
আসলে যে সকল সার্ভিস আপনি কখনো ব্যবহার করেন না সেগুলোকে বন্ধ করে দিতে পারেন। এগুলো ছাড়াও আরেকটি সার্ভিস আপনি বন্ধ করে দিতে পারেন সেটা হচ্ছে “রিমোট লগইন”। অর্থাৎ যা আপনার প্রয়োজন নেই সেগুলো বন্ধ করে দিন। এই সার্ভিসগুলো বন্ধ করবার পর আমার পিসির বুট সময় এসে দাঁড়ায় ৬৮ সেকেন্ডে।
স্টার্টাপ অ্যাপ্লিকেশন বন্ধ করন: msconfig উইন্ডোর সার্ভিস ট্যাবের পাশেই রয়েছে স্টার্টাপ ট্যাব। এখানে লিপিবদ্ধ থাকে কোন কোন প্রোগাম বুটের সময় চালু হবে। এখানে দেখবেন কিছু আপডেট করবার সার্ভিস রয়েছে এগুলো আপনি নিজে নিজে করতে পারেন এর জন্য আপনার বুট সময় অপচয় করবার প্রয়োজন নেই। এধরণের অ্যাপ এর মাঝে গুগল আপডেট, অ্যাডব আপডেট অথবা আইটিউন্স অন্যতম। টিক চিহ্ন সরিয়ে ফেলুন এগুলোর বক্স থেকে। দেখুন আর কি কি রয়েছে এবং যেগুলো আপনার কাছে মনে হয় বুটের সময় চালু না হলেও চলবে বন্ধ করে দিন সে সকল অ্যাপগুলোকে। বুট সময় এসে দাঁড়ালো ৫৭ সেকেন্ডে। দেখুন কতখানি উন্নতি হয়েছে, একলাফে ৬৮ থেকে ৫৭ সেকেন্ডে এসে দাঁড়িয়েছে।
সিস্টেম বায়োস টুইক: মাদারবোর্ড ভেদে এই টুইকগুলো নির্ভর করবে। তবে বুটের সময় সিডি/ডিভিডি চেক বন্ধ করে দিতে পারেন, আপনার মাদারবোর্ডে যদি এক্সটারনাল সাটা কানেক্টর থাকে এবং তা যদি আপনি ব্যবহার না করেন তাহলে বায়োস সাটা কন্ট্রোল চেক বন্ধ করে দিতে পারেন। অনেক নতুন হাই-এন্ড মাদারবোর্ডের সাথে দুইটি নেটওয়ার্ক পোর্ট থাকে। আপনি যদি একটার বেশি ব্যবহার না করে থাকেন তাহলে আরেকটি চেক করার অপশনটিও বন্ধ করে দিতে পারেন। বুট সময়: ৫২ সেকেন্ড।
রেজিস্ট্রি পরিষ্কার করার মাধ্যমে: এ কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন পিরিফর্মের Ccleaner অথবা বাংলাদেশী বর্ণনা ল্যাবের তৈরি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ঝাড়ুদার১.৩ সফটওয়্যারটিকে। রেজিস্ট্রি পরিষ্কারের পর বুট সময় এসে দাঁড়ালো ৫০সেকেণ্ডে।
বুট টাইমআউট পরিবর্তন: msconfig উইন্ডোর সার্ভিস ট্যাবের বাম পাশে রয়েছে বুট ট্যাব সেখানে রয়েছে টাইমআউট অপশনটি। সাধারণত ডিফল্ট সিলেকশন থাকে ৩০ সেকেন্ড, তা কমিয়ে নিয়ে আসুন ১০ সেকেন্ডে। বুট সময় এসে দাঁড়ালো ৪৭ সেকেন্ডে। আপনি ইচ্ছা করলে বুট প্রসেসের প্রতিটি ধাপের আরো গভীরে জেতে পারেন, কিন্তু খুব সহজ কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করে বুট সময়কে ৬৯ সেকেন্ড থেকে ৪৭ সেকেন্ডে নিয়ে আশা সম্ভব হয়েছে তাও কিন্তু কম নয়, প্রায় ৩০ ভাগ কমানো গিয়েছে। পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করে কতখানি বুট সময় আপনারা কমাতে পেরেছেন আমাদেরকে জানালে খুশি হবো । ধন্যবাদ।
ABOUT ME
Hi all. This is My Frist Blog. We're providing content for Bold site and we’ve been in internet, social media and affiliate for too long time and its my profession. We are web designer & developer living Bangladesh! What can I say, we are the best..
0 comments :
Post a Comment